প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৩১ জন। এছাড়া
গণপিটুনিতে আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়েছে ৩৪ জন। বেসরকারি সংস্থা ‘অধিকার’-এর ত্রৈমাসিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চালানো হত্যাকাণ্ডকেই বিচার বহির্ভূত হত্যা (এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিং) বলা হয়। অধিকার একইসঙ্গে গণপিটুনিতে মৃত্যু প্রসঙ্গেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বেসরকারি সংস্থাটির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান বললেন, ‘‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা অব্যাহত রয়েছে।’’
তিন মাসে ৩১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাসে ৩১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
নিহত ৩১ জনের মধ্যে ২৬ জন ‘ক্রসফায়ার/এনকাউন্টার/বন্দুকযুদ্ধ’ ইত্যাদিতে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে র্যাব কর্তৃক ১৭ জন, পুলিশ কর্তৃক তিনজন, র্যাব-পুলিশ কর্তৃক যৌথভাবে দুইজন ও র্যাব-কোস্টগার্ড যৌথভাবে কর্তৃক চারজন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিহত ৩১ জনের মধ্যে দুইজন গণমুক্তি ফৌজের সদস্য, একজন ব্যবসায়ী, একজন মাছ ব্যবসায়ী, একজন বাসের হেলপার, একজন নাটোর জেলা কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং বাকি ২৫ জন অন্যান্য শ্রেণী-পেশার নাগরিক বলে জানা গেছে।
গণপিটুনিতে মৃত্যু ৩৪ জনের
অধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান গণপিটুনির ক্রমবর্ধমান প্রবণতার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে বললেন, ‘‘ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দুর্বল, এছাড়া সামগ্রিকভাবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমে গেলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজের হাতে আইন তুলে নেবার প্রবণতা দেখা দেয়।’’ এই তিন মাসে ৩৪ ব্যক্তি গণপিটুনিতে মারা গেছেন।
জেল হেফাজতে মৃত্যু তিন মাসে ২১ জন বন্দি জেল হেফাজতে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ১৯ জন অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গেছেন, একজন আত্মহত্যা করেছেন ও একজনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।
রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নির্যাতন চলছেই
১৮ জন ব্যক্তি বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিন মাসে। এদের মধ্যে ১৫ জন প্রাণে বেঁচে গেছেন।
পুলিশের হাতে নয়জন, র্যাব-পুলিশের হাতে যৌথভাবে পাঁচজন ও জেল কর্তৃপক্ষের হাতে একজন নির্যাতিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘অধিকার মনে করে রিমান্ডে এবং অন্তরীণ অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদকালে নির্যাতন মানবাধিকারের চরম লংঘন। নির্যাতনের ক্ষেত্রে সরকারেরর ‘জিরো টলারেন্স’ এর ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্যাতন এবং এই ক্ষেত্রে তাদের দায়মুক্তি বন্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা তো নেয়ই নি বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে উপেক্ষা করে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের উৎসাহিত করছে।’’
ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় ২০০৩ হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নির্যাতনবিরোধী সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে অধিকার।
No comments:
Post a Comment