এপিএস ওমর ফারুক ও জিএম ইউসুফ মৃধার জন্য অপেক্ষা করছিলেন রেলপথ মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রাত ৯টা থেকে ৯টা ৪০ মিনিটের মধ্যে এ দু’জনকে ১০ বার ফোন করেছেন তিনি। এপিএস ও জিএমকে বহনকারী গাড়িটিতে থাকা রেলওয়ের কমান্ড্যান্ট এনামুল হক বলেন, ‘পথে মন্ত্রী মহোদয় তাদের দু’জনকে একাধিকবার ফোন করেন। একবার এপিএস
ফারুক
ফারুক
মন্ত্রী মহোদয়কে বলেন, স্যার, আর ১০ মিনিট লাগবে।’ এছাড়া, গভীর রাত পর্যন্ত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সরকারের উচ্চমহলে ফোনে কথাবার্তা বলেছেন। মন্ত্রীর ফোন কল পরীক্ষা করে এ তথ্য জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তবে তিনি কি কথাবার্তা বলেছেন তা জানা যায়নি। ওই গোয়েন্দা সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, মন্ত্রীর ভয়েস রেকর্ড উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তার কাছে এ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
সোমবার গভীর রাতে টাকার বস্তাসহ বিজিবি’র হাতে আটক হন রেল মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’র এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের জিএম ইউসুফ মৃধা ও কমান্ড্যান্ট এনামুল হক। ওমর ফারুকের গাড়িচালক আজম খান অবৈধ টাকা বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করে বিজিবি কার্যালয়ে ঢুকে যান। তবে ঘটনার পর এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি বিজিবি। এমনকি টাকার বস্তাও উদ্ধার বা জব্ধ দেখানো হয়নি। ওদিকে রেলের জিএম ইউসুফ মৃধার বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শশী কুমার সিংহকে। কিন্তু তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ আছে। গত বছর মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক থাকাকালে তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। এমনকি তার স্ত্রী একটি অতি পুরনো স্টিল আলমারি মেরামত করতে দিয়েছিলেন এক দোকানে। ওই আলমারির ড্রয়ারে ২৩ লাখ টাকা পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ওই অর্থ উদ্ধার করে।
আজম খানকে জিজ্ঞাসাবাদ: রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ফারুক তালুকদারের গাড়িচালক আজম খান বিজিবি হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। তাকে গতকালও গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ নিউ মার্কেট থানায় গতকাল দেয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সে অভিযোগ গ্রহণ করেনি থানা পুলিশ। অবশ্য বিজিবি বা অন্য কোন সংস্থার তরফে কোন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি তারা। থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বলেন, এখন পর্যন্ত টাকা উদ্ধারের ঘটনায় কোন অভিযোগ আসেনি। একই কথা বার বার বলতে ভাল লাগে না। যোগাযোগ করা হলে রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
শশীর আমলনামা: ‘ডিসির ২৩ লাখ টাকা নিয়ে শহরের সর্বত্র তোলপাড়’- গতবছর ২৭শে এপ্রিল মাদারীপুরের স্থানীয় সংবাদপত্রে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শশী কুমার সিংহকে নিয়ে এ শিরোনাম হয়েছিল। বিষয়বস্তু ছিল জেলা প্রশাসকের পরিত্যক্ত আলমারি থেকে ২৩ লাখ টাকা উদ্ধার। তখন মাদারীপুরে পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণের নামে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবন থেকে মেরামতের উদ্দেশ্যে শহরের হামিদ আকন্দ সড়কের বাদামতলা এলাকার মক্কা স্টিলের দোকানে একটি পরিত্যক্ত আলমারি পাঠানো হয় মেরামতের জন্য। দোকানের কর্মচারীরা আলমারিটি কারখানাতে নিয়ে রাখেন। দুই দিন পর মেরামতের জন্য আলমারির সব ড্রয়ার খুলে ফেললে একটি ড্রয়ার ভর্তি টাকা দেখতে পেয়ে কর্মচারীরা ভয় পেয়ে যান। পরে তারা টাকা গুনে দেখেন সেখানে আছে ২৩ লাখ টাকা। বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ এসে টাকা উদ্ধার করে। পরে মক্কা স্টিল কর্র্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসায় টাকা পৌঁছে দেয় পুলিশ। টাকা হাতে পেয়ে জেলা প্রশাসক শশী কুমার সিংহের মনে পড়ে তার আলমারিতে টাকা ছিল। টাকা ফিরে পেয়ে তিনি মক্কা স্টিলের মালিক ও পুলিশকে বকশিশও দেন। সেখান থেকেই পদোন্নতি পেয়ে তিনি যুগ্ম সচিব হন। পরে তিনি রেল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে যোগ দেন।
ভুয়া মোবাইল সংযোগ: সুরঞ্জিতের এপিএস ও রেলের জিএম দু’জনেই ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের একাধিক মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করতেন। গত এক মাসে অন্তত ৫ বার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করেছেন এপিএস ওমর ফারুক। সর্বশেষ তিনি ব্যবহার করছিলেন ০১৭৫৫৫০০৪৯২ নম্বরটি। সেটিও এখন বন্ধ। তার মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর ট্র্যাকিং করে একাধিক মোবাইল সংযোগ ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। ওমর ফারুক সবগুলো নম্বরই কিনেছেন বেনামে। ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে সংযোগগুলো রেজিস্ট্রি করা। একই অবস্থা রেলের জিএম ইউসুফ মৃধার ক্ষেত্রেও। তিনিও একাধিক ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করেছেন।
No comments:
Post a Comment