Friday, April 20, 2012

তোপের মুখে শুক্রবার পানিসম্পদমন্ত্রী এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন


প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকদের একের পর প্রশ্নের তোপের মুখে শুক্রবার পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার যুমনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে টাকা অপচয়সহ নানা অভিযোগে ৬ সরকারি কর্মকর্তাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ভর্ৎসনা করেন।  


এরপর পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন শুক্রবার সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকরা প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর মন্তব্য বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকলে মন্ত্রী তড়িঘড়ি স্থান ত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা উন্নয়ন সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস যুমনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে টাকা অপচয়সহ নানা অভিযোগে পাউবোর বিশেষায়িত শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান এবং তার সহকর্মী পরিচলন ও পর্যবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুজয় চাকমাকে ড্রেজিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় করার জন্য ক্ষুদ্ধ হন।

এ সময় সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করে মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতুর দুইপাশে যমুনায় চায়নাদের দিয়ে বালি খনন করে পাউবো মূলত বালির ব্যবসা শুরু করেছে। নদী খননের নামে তারা সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে।

এছাড়াও তিনি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধে ২০১১ সালে বার বার ভাঙনের সময় সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ পাউবোর কর্মকর্তাদের রক্ষা করেছিল। কিন্তু এবার যদি বাঁধ ভাঙে, তাহলে শহরবাসী তাদের ছাড়বে না। কোনো বাহিনীই শেষপর্যন্ত তাদের বাঁচাতে পারবে নাবলে মন্তব্য করেন।

এছাড়াও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ের গোল চত্বর এলাকায় মুরগি পরিবহনকারী ট্রাকে অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা পরীক্ষার নামে চালকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগের কথা উল্লেখ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের ওপর ক্ষিপ্ত হন। 
 
এরপর শুক্রবার সকাল ১১টার সময় পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে পৌঁছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকরা প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে একের এক প্রশ্ন করতে থাকেন। 
এসময় তিনি একের পর এক প্রশ্নে বিব্রত হয়ে জবাব ঠিকমতো দিতে না পেরে তড়িঘড়ি বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে যমুনার খনন কাজ দেখতে চলে যান। 

ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আফজাল হোসেন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কে.এম.হোসেন আলী হাসান, পাউবোর বিশেষায়িত শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান, পরিচলন ও রক্ষণাবেক্ষণ (পওর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুজয় চাকমা, সদর সার্কেল এসপি মো. শফিকুল ইসলামসহ চায়না হারবার কর্তৃপক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। 
জেলা প্রশাসক নিজেই চীনা কর্তৃপক্ষের খনন কাজ দেখে  নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এমনকী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কে.এম.হোসেন আলী হাসান বাঁধ সংস্কার ও মেরামত কাজের নানা অনিয়ম তুলে ধরলেও মন্ত্রী ঠিকমতো আমলে না নিয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে স্থান ত্যাগ করেন। 

উল্লেখ্য, গত ৩ বছরে যমুনার ভাঙনে শহর রক্ষা বাঁধ পর পর ৬ বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁধের প্রায় ৫শ মিটার যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। 
গত ৩ বছরে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কার ও মেরামতে পাউবো থেকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। এ ছাড়া চলতি অর্থ বছর বাঁধের উজানে ও পাশে নদীর গতিপথ পরিবর্তনে চায়না হারবার ও দেশীয়দের দিয়ে প্রায় ১৪ কিমি অংশে খননের জন্য সাড়ে ৪শ কোটি টাকার নদী খনন প্রকল্প পাউবো থেকে হাতে নেওয়া হয়। 

কিন্তু চরের বালি কেটে চরে ফেলায় এবং খনন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতে যথেষ্ট পাইপ লাইন মজুদ না থাকায় শুরু থেকেই তাদের ওপর শহরবাসীর আস্থা হারাতে শুরু করেন। 
সেই সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। 

No comments:

Post a Comment