চট্টগ্রামের একটি বিশেষ আদালতে চাঞ্চল্যকর দশ
ট্রাক অস্ত্র মামলার সাক্ষী ডিজিএফআই’র সাবেক ডিটাচমেন্ট কমান্ডার কর্নেল অব. এ কে এম রেজাউর রহমান
বলেছেন, ‘‘২০০৪ সালের ২ এপ্রিল সকালে
একজন অনিয়মিত সোর্সের কল পেয়ে
সিইউএফএল জেটি ঘাটে অস্ত্র আটকের খবর জানতে পারি।’’সে সময় চট্টগ্রামে কর্মরত রেজাউর আরো বলেন, আটককৃত অস্ত্রের মান ও পরিমাণ দেখে তার ধারণা হয়েছিল এগুলো ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘উলফা’ আথবা ‘এনএসিএন’র হতে পারে এবং তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তা সংস্থার তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমিকে (মামলার অন্যতম সাক্ষী) তার ধারণার কথা অকপটে জানান বলেও জানান।
আদালতে রেজাউর জানান, ঘটনা তদন্ত করতে আসা এনএসআই’র তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে এ ব্যপারে (অস্ত্র আটক) আমাদের আর কিছু করার আছে কিনা জিজ্ঞাস করা হলে তিনি ‘‘ডোন্ট ওরি, তোমাদের আর কিছুই করার নেই’’ বলে জবাব দেন।”
চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমানের আদালতে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে দুইটা পর্যন্ত চলে। সাক্ষ্য প্রদানের পর পরই আসামি রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ তাকে জেরা করেন। আদালত আগামী ৭ মে এ মামলার নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন এবং ওইদিন রেজাউরের অসমাপ্ত জেরা সম্পন্ন করার আদেশ দেন।
মঙ্গলবার এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এনামুর রহমান চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে দুই সপ্তাহ পর চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র আটক এবং চোরাচালান মামলা দুটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।
বেলা ১২টার দিকে জামায়াত নেতা ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটক ১০ আসামিকে কড়া প্রহরায় আদালতে হাজির করা হয়। সিইউএফএল এর সাবেক জিএম এনামুল হক অসুস্থ থাকায় দ্বিতীয় দিনও আদালতে হাজির করা হয়নি ।
কর্নেল অব. রেজাউর বলেন, “অস্ত্র আটকের পরদিনই তৎকালীন স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ডিজিএফআই’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাদেক হাসান রুমিসহ সাংবাদিকদের একটি টিম হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসেন। তারা তৎকালীন চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মঈর ইউ আহমদসহ দামপাড়া পুলিশ লাইন মাঠে রাখা অস্ত্রগুলো পরিদর্শন করেন। শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দামপাড়া পুলিশ লাইনে প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেন।”
প্রদত্ত সাক্ষ্য তিনি আরো বলেন, “প্রথম আলোসহ জাতীয় পর্যায়ের কিছু পত্রিকা পড়ে জানতে পারি এনএসআই এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বেশ প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী লোক। এ ঘটনায় তার এবং এনএসআই’র সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এ প্রভাবের কারণে তদন্ত প্রতিবেদনে অস্ত্র নিয়ে আসার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি বাদ পড়ে যায়।”
অবশ্য আদালতের প্রশ্নের জবাবে রেজাউর প্রথম আলো ছাড়া অন্য পত্রিকার নাম ও এ খবর প্রকাশের তারিখ সম্পর্কে বলতে পারেননি।
কর্নেল অব. রেজাউল বলেন, “অস্ত্র আটকের কয়েকদিন পর তদন্ত কাজে চট্টগ্রাম আসেন রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী। এসময় তাকে এ ঘটনায় আমাদের আর কি করার আছে জানতে চাইলে তিনি তেমন কিছুই করার নেই বলে উত্তর দেন।”
ইতিপূর্বে এ মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিল্পসচিব ড. শোয়েব আহমদ চৌধুরী, বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান বীরবিক্রম, এনএসআই’র সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এনামুর রহমান চৌধুরী, সিএমপির তৎকালীন সহকারী-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুর রহমানসহ আটজন সাক্ষ্য দেন।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল গভীর রাতে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল এর জেটীতে খালাসকালে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটকের ঘটনায় অস্ত্র ও চোরাচালান আইনে দুটি মামলা হয়।
No comments:
Post a Comment