প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
নতুন প্রজন্মের কাছে খুবই
প্রিয় একজন কবি জয় গোস্বামী। কলকাতার সিনিয়র সাংবাদিক সুব্রত আচার্য্যের কাছে
আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ’দেখুন এই যে
বর্ষবরণের আয়োজন সেটি’তো বাংলাদেশের
মানুষই মনপ্রাণ দিয়ে করেন। এটিও এপার বাংলায় হয় না। ঢাকায় যে মঙ্গল শোভাযাত্রার
মধ্য দিয়ে বছরকে স্বাগত জানানো
হয়, যা এপার বাংলার
কাছেও দৃষ্টান্ত। এখানে বাংলা যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে... কষ্ট হয় ভীষণ !।
এমন মন্তব্যই প্রমাণ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রায়
সাড়ে ন’কোটি বাঙালির রাজ্যে দেশের
সরকারি ভাষা ’হিন্দি’ এবং আন্তর্জাতিক ভাষা ’ইংরেজি’ কতটা প্রভাব ফেলেছে।
সংগত কারণে বাংলা ভাষারই যেভানে এমন দূরবস্থা সেখানে
এই ভাষাভাষিদের যেকোনো উৎসবের রঙের মধ্যে খানিটকা ফিকে ভাব থাকবে, সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
কিন্তু বাঙালি সত্তা তো এখনো আছে। হরিয়ে যায়নি সেই সনাতনি হালখাতার রীতিও। বাড়ি
বাড়ি গিয়ে বড়দের প্রমাণ করা। মিষ্টি মুখ হওয়া কিংবা করা। এর জন্য সরকারির
পৃষ্ঠপোষক থাক কিংবা না থাক কোনো পরোয়া নেই।
তাই সরকারি আয়োজনের দিকে তাকিয়ে না থেকে এপারের
বাঙালিরা তাদের বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রেখেই ঘরে ঘরে নানা আয়োজন চলিয়ে যাচ্ছে ১৪১৯
বঙ্গাব্দকে বরণ করতে। বাজারে ইলিশ নেই। চড়া দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে আম। মিষ্টির
দোকানে লম্বা লাইন। তরমুজ-আঙুর; ফলের দামও আকাশ
ছোঁয়া।
দোকানে হালখাতা। দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির কিংবা
কালীঘাটের মন্দিরে সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ নতুন বছরের সুখ-স্বাছন্দ কিংবা
জরাব্যাধি থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় হাত জোড় করেছিলেন ঈশ্বরের কাছে।
নতুন বছরের খাতা খুলতে সকাল থেকে কলকাতার প্রাচীন ’বড়বাজার’ এবং কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়ার
দোকানগুলোতে নানা আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো। ঐতিহাসিক কফি হাউজকেও সাজানো হয়েছে
বাঙালিয়ানায়।কী এসবই তো বাঙালির বর্ষবরণের অনুসঙ্গ।
সরকারের পক্ষ থেকে পত্র-পত্রিকাগুলোতে ক্রোড়পত্রের
মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পাঠানো
এসএমএস বার্তা কোটি কোটি মোবাইল গ্রাহকদের মোবাইল ঢুকে গিয়েছে নববর্ষের সূর্য
উদয়ের আগে। তবে সরকারি কোনো আয়োজন নেই। এখানেই ফাঁক রয়ে গেল অনেক।
পয়লা বৈশাখে এখানে সরকারি ছুটি না থাকলেও আজ বাবা
আম্বেদকারের জন্মদিন থাকায় দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
শনিবার বিকালে শিশির মঞ্চ, নন্দন ছাড়াও গিরিশ পার্কে
বিভিন্ন সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংস্থা পৃথক-পৃথক ভাবে বর্ষবরণের আয়োজন রয়েছে।
কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসে আয়োজন করা হয়েছে
বর্ণাঢ্য এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সন্ধ্যায় এই আয়োজনের ফাঁকে সদ্য যোগ দেয়া
উপরাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম কলকাতা ও ঢাকার সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য
সাক্ষাত করা কথা রয়েছে। ত্রিপুরা, আসাম এবং
ঝাড়খন্ডেও বাঙালির এই বহু বছরের পুরোনো রেওয়াজ বর্ষবরণ উদযাপন হচ্ছে স্থানীয় নানা
বিধি মেনে।
No comments:
Post a Comment