Friday, April 20, 2012

ছিটমহলগুলি থেকে ভারতের মূল ভূখণ্ডে এসে নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহী


প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেসব ভারতীয় ছিটমহল আছে, সেখানকার জনসংখ্যার দেড় শতাংশেরও কম মানুষ ভারতের মূল ভূখণ্ডে গিয়ে সেদেশের নাগরিকত্ব নিতে চান। অন্যদিকে, ভারতের জমিতে যেসব বাংলাদেশী ছিটমহল আছে, সেগুলোর সব বাসিন্দাই ভারতের নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।


দুই দেশের মধ্যে যদি ছিটমহল বিনিময় হয়, তাহলে কে কোন দেশের নাগরিকত্ব পেতে চান, তা নিয়ে ছিটমহলবাসীদের সংগঠন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সমীক্ষাটিতে জানা যাচ্ছে, মাত্র ১৪৯টি পরিবারের সর্বাধিক ৭৪৩ জন মানুষ বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ভারতীয় ছিটমহলগুলি থেকে ভারতের মূল ভূখণ্ডে এসে সেদেশের নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহী।

ভারতীয় ছিটমহল, নাজিরগঞ্জ-দৈখাতার অধিবাসী জয়প্রকাশ রায় বলছিলেন, “আমি পুরো পরিবার নিয়েই ভারতে চলে আসতে চাই। আমরা তো একদিন কোচবিহারের-ভারতের নাগরিকই ছিলাম। দেশভাগের পরে ছিটমহলের বাসিন্দা হয়ে গেছি। এখন যদি ছিটমহল বিনিময় হয়ে যায়, তাহলে আবার দেশে ফিরতে চাই। এতদিন যেখানে আছি, সেখানে তো আইনকানুন নেই। অন্ধকারের রাজত্বে আছি। এবার আলো দেখতে চাই ।

অন্যদিকে বাংলাদেশের যেসব ছিটমহল ভারতের ভেতরে রয়েছে, তারাও বাংলাদেশে ফিরতে রাজি নন। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার ভেতরে বাংলাদেশী ছিটমহল পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা সাহেব আলি বলছিলেন আমাদের খাওয়া পরা, সবই ভারতের সঙ্গে। প্রথম থেকেই তো আমরা এটা নিয়েই আন্দোলন করছি যে আমরা ভারতীয় হতে চাই। নাগরিকত্ব পেলে যেভাবে ভারতের সাধারণ মানুষ রোজগারপত্র করে, আমরাও সেভাবেই কাজ করে খাব।

তবে জয়প্রকাশ রায়ের মতো মানুষ খুবই কম- যারা ভারতের নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহী।
সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে যে মোট ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের মধ্যে মাত্র ১২টির থেকে কিছু মানুষ ভারতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের ভেতরে থাকা পঞ্চগড় জেলার তিনটি, লালমনিরহাট জেলার আটটি আর কুড়িগ্রাম জেলার একটি ভারতীয় ছিট থেকেই ওই মানুষরা ভারতে চলে আসতে আগ্রহী।

সমন্বয় কমিটির প্রধান দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলছিলেন যে তারা অনেকদিন ধরেই জানতেন যে ছিটমহল বিনিময় হলে খুব কম মানুষই স্থান বদল করতে চাইবে, এখন সমীক্ষায় সেটা প্রমাণিত হয়ে গেল।
যেসব মানুষ বা রাজনৈতিক দল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে ছিটমহল বিনিময় হলে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলি থেকে প্রচুর মানুষ মূল ভূখণ্ডে চলে আসবেন, নতুন করে সমস্যা তৈরি হবে, তাদের সেই ধারণাটা যে ভুল, তার প্রমাণ এই সমীক্ষার ফলাফল,“ বলছিলেন দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।

তিনি আরও বলছিলেন, যেসব পরিবার ভারতে চলে আসতে আগ্রহী, তারা কেউই অবস্থাপন্ন পরিবারের মানুষ নন আর সবাই যে পুরো পরিবার নিয়েই ভারতে চলে আসবেন, এমনটাও নয়।
পরিবারের কয়েকজন সদস্য হয়তো বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে চাইছেন। বাকিরা ভারতে আসতে চাইছেন। যেটুকু জমি ছিটমহলে আছে, সেটার ওপরেও পরিবারের দখল থাকল, আবার কয়েকজন ভারতে এসে কাজকর্ম খুঁজে নিলেন”, বলছিলেন মি. সেনগুপ্ত।
সমন্বয় কমিটি বলছে যে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হবে, এই আশা নিয়েই তারা সমীক্ষাটি চালিয়েছেন আর তার বিস্তারিত তথ্য কয়েকদিনের মধ্যেই দুই সরকারের হাতে তুলে দেবেন।

কমিটি আরও বলছে, যেসব পরিবার বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলি থেকে মূল ভূখণ্ডে চলে আসবেন, তাদের পুর্নবাসনের জন্য সরকার যদি কোনওরকম ব্যবস্থা নাও করে, তাহলেও তারাই পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করবেন। এজন্য তারা ইতিমধ্যেই ২৩ একর বেসরকারি জমি চিহ্নিত করেছেন । সূত্র: বিবিসি।

No comments:

Post a Comment