Wednesday, April 4, 2012

ভারতের নদীসংযোগ প্রকল্পে রাজি হতে বাংলাদেশ পারে না



প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক


ত্রিশটির বেশি আর্ন্তজাতিক নদীকে পরস্পর সংযুক্ত করে পানি প্রত্যাহারে ভারতের নেয়া প্রকল্প দ্রুত শুরু করতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক আদেশে উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর সরকার
ও বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। শুক্রবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি নিউজ। বিবিসি’র পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদক নবীন সিংহ খাদকা’র করা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী এ বিষয়ে বাংলাদেশের নারাজির কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে এখনো এ প্রকল্পের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি ভারত সরকার। বাংলাদেশ আগে থেকেই বলে আসছে যে, যেহেতু এ নদীগুলোর মধ্যে দুটো প্রধান নদীও আছে ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব এখানেই পড়বে। নেপাল ও ভুটানের বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বিবিসি’র কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
কয়েক বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পটি ২০০২ সালে ভারত ঘোষণা করলেও এখনো তার বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। ১২০ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট সময় লাগবে ১৬ বছরেরও বেশি। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন পর্যায় শুরু না হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি দ্রুত কাজ শুরু করার আদেশ দেয় সরকারকে। এমনকি প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য ‘সময় নির্ধারণ’ করে দিয়ে একটি কমিটিও নিয়োগ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আমরা কখনোই এ প্রকল্পে রাজি হতে পারি না
এ পটভূমিতে দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী শুক্রবার বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা কখনোই এ প্রকল্পে রাজি হতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কৃষি, অর্থনীতি এবং আমাদের জীবন এসব নদীর ওপর নির্ভরশীল। এ নদীগুলোর পানি সরিয়ে নেয়া হবে সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।’’
ভারতের নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীও, এশিয়ার অন্যতম প্রধান এ দুটি নদীর প্রবাহ ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে বঙ্গোপসাগরে পতিত হবার আগে।
মন্ত্রীর চেয়ে কড়াভাবে এ প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বিবিসিকে বলেছেন, ‘‘মনে হয় যেন ভারত ধরে নিচ্ছে তাদের সীমানায় এসে এ নদীগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এ পানিসম্পদ নিয়ে তারা যদি কোনো কিছু করে তবে তাতে যেনো ভাটিতে বাংলাদেশে এর কোনো প্রভাব পড়বে না!’’
আইনুন নিশাত বলেন, ‘‘ভারত সবসময়ই চিন্তা করতো যে ব্রহ্মপুত্রে বুঝি বাড়তি পানি আছে অনেক। কিন্তু তাদের দেখে এটা কখনোই মনে হয়না তারা এ বিষয়টা মাথায় রাখছে যে ভাটিতে বাংলাদেশ নামে একটা সার্বভৌম দেশ আছে, যে দেশের পানির দরকার হয়।’’
মন্ত্রী রমেশ সেন জানিয়েছেন, ভারতের তরফে এ প্রকল্প বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়নি।
কোনো তথ্য দেয়া হয়নি নেপাল ও ভুটানকেও। বিবিসিকে এ কথা জানিয়ে নেপালের জ্বালানি মন্ত্রী পোস্তা বাহাদুর বোগতি এবং ভুটানের কৃষি ও বনমন্ত্রী পেমা গেমতসো নদী সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।  আইনুন নিশাতের মতোই উদ্বেগ জানিয়েছে নেপালের প্রবীণ পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সান্তা বাহাদুর পান।
মন্তব্য করতে ভারতের অস্বীকৃতি
এ বিষয়ে বিবিসর প্রশ্নের জবাব দিতে বা কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিবিসি লিখেছে, ‘‘প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালের সঙ্গে ভারতের করা অতীতের অনেক পানি চুক্তিও নানা বিরোধে অকার্যকর হয়ে আছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখো গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ সময়ে পানিসম্পদের ক্ষেত্রে বিশ্বে ঘটনাবহুল জায়গাগুলোর একটা হবে দক্ষিণ এশিয়া।’’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘আমেরিকার ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলোর ধার্যকৃত পূর্বানুমান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া হবে দুনিয়ার অন্যতম অঞ্চল যেখানে যুদ্ধ অথবা সন্ত্রাসবাদের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হবে পানি।’’

No comments:

Post a Comment